এন্ডোরফিন
Table of Content:
এন্ডোরফিন
আফিমের ইংরেজি নাম morphine, Morphine হল সবচেয়ে কার্যকর ব্যাথা নাশক ওষুধ। প্রচন্ড হার্টের ব্যাথায় এটা আগে দেয়া হত, যেখানে অন্য ব্যাথার ওষুধ তেমন কাজ করত না। এ মরফিনের একটা বড় সমস্যা হল নেশা (addiction) হওয়া। একটার পর দ্বিতীয় মরফিন ইঞ্জেকশন দিল মানুষদের অতি ফুর্তি বা আনন্দদায়ক অনুভূতি হত এবং ওষুধটি নেশায় পরিণত হয়ে যেত। এজন্য ওষুধটির ব্যবহার পরে বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৭৪ সালের দিকে বিজ্ঞানীরা দেখেন, শরীরে এরকম ব্যথা নাশক কেমিক্যাল আছে, endogenous morphine. তারা সংক্ষেপে এর নাম দিলেন endorphin.
ব্যাথা নাশকের পাশাপাশি এ এন্ডোরফিন মনে আনন্দের অনুভূতি আনে। ভারী ব্যায়াম (Vigorous exercis) করলে ব্রেনে এন্ডোরফিন নিঃস্ত হয়। এ জন্যে খেলাধুলা, দৌড়ানো ইত্যাদি কাজের পর মানুষ ফুর্তি বা আনন্দ অনুভব করে। ভারী ব্যায়ামে ৩০ মিনিট পর এবং হালকা ব্যায়ামে, যেমন দ্রুত হাটা, ১ ঘন্টা পর এন্ডোরফিন নিঃসরণ শুরু হয়।
ধর্মীয় কাজ করলে, যেমন খুব মনোযোগে নামাজ পড়লে বা কোরআন পড়লে বা জিকির করলে ব্রেনে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়। ফলে মনে আনন্দ আসে।
(অনেকে ধার্মিক ব্যক্তিদের এ আনন্দ দেখে মন্তব্য করত, ধর্ম আফিম (morphine) এর মত।
এন্ডোরফিনের সংগে মরফিনের পার্থক্য হল, এন্ডোরফিনে নেশা (addiction) হয় না।
এন্ডোরফিনের কার্যকারিতা:
-
ব্যথা উপশম:
- এন্ডোরফিনকে প্রাকৃতিক ব্যথানাশক বলা হয়। এটি শরীরের ব্যথার অনুভূতিকে কমায় এবং আমাদের আরামদায়ক অনুভূতি প্রদান করে।
-
সুখের অনুভূতি:
- এটি মস্তিষ্কে সুখ ও আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি করে। যে কারণে একে "Feel-good chemical" বা ভালো লাগার রাসায়নিকও বলা হয়।
-
স্ট্রেস কমানো:
- এন্ডোরফিন স্ট্রেস হরমোন (যেমন কর্টিসল) কমায় এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
-
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করা:
- এন্ডোরফিন ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে এবং আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
-
ঘুম উন্নত করা:
- এন্ডোরফিন রিলিজ ঘুমের গুণমান উন্নত করে এবং ইনসমনিয়ার মতো সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
এন্ডোরফিন কীভাবে উৎপন্ন হয়?
নিচের কাজগুলো করলে মস্তিষ্কে এন্ডোরফিন উৎপন্ন হতে পারে:
-
অব্যাহত শরীরচর্চা (Exercise):
- যেমন দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, বা জিমে ব্যায়াম করলে এন্ডোরফিন বাড়ে। এ কারণে অনেকেই একে "Runner's High" বলে।
-
হাসি ও আনন্দ:
- হাসি বা আনন্দের সময় এন্ডোরফিন বাড়ে। হাসি মানসিক চাপ কমিয়ে শরীরে সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করে।
-
চকোলেট বা মশলাদার খাবার:
- চকোলেট খেলে এন্ডোরফিন রিলিজ হতে পারে। একইভাবে, ঝাল খাবারেও সামান্য এন্ডোরফিন উৎপন্ন হয়।
-
মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম:
- মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম অনেক কার্যকর। এটি এন্ডোরফিন উৎপন্ন করে মানসিক প্রশান্তি আনে।